আপনি কি আত্মস্বাধীনতা লাভ করেছেন? নিজেকে ইউ.০ সংস্করণে উন্নীত করুন

আপনি নিরাপদে নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠেছেন, সৃষ্টি করেছেন, অর্থ কামিয়েছেন। অর্থাৎ, আর্থ-সামাজিকভাবে আপনি যথেষ্ট স্বাধীন ছিলেন। কিন্তু তারপরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আপনি কি আসলেই স্বাধীন? আমাদের প্রয়োজন ‘আত্মস্বাধীনতা’। এটি কী আপনার আছে?
আমরা দৈহিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করি। আমরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাই। তারপরও এখানে আত্মস্বাধীনতার অভাব থেকেই যায়। এই অনুভব থেকে বোঝা যায়, আপনার ভেতরের আসল নায়কটি ঘুমিয়ে রয়েছে এবং সেখান থেকেই এই স্বাধীনতার অভাব বোধ হয়।
এসব স্বাধীনতার আবেদনকে প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত আসা নতুন নতুন সংস্করণের মতো করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় লেখক সন্তোষ শর্মা।
মানুষ হিসেবে আপনার দৈহিক স্বাধীনতাকে ১.০ সংস্করণ ধরে নিন। এই সংস্করণে যোগ হবে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যোগ হয়ে ২.০ সংস্করণে উন্নীত হবেন। তবে এদের সঙ্গে আত্মস্বাধীনতার যোগ ঘটিয়ে একে ৩.০ করতে পারবেন না। কারণ, অন্যান্য স্বাধীনতা সমাজ হয়ে আপনার কাছে আসবে। কিন্তু এখানে আত্মস্বাধীনতাকে ‘ইউ.০’ সংস্করণ দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। কারণ এর আবেদন সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এখানে ‘ইউ’ আপনি নিজে এবং যেহেতু সবে আত্মস্বাধীনতা অর্জন করেছেন তাই এটা শূন্য (০) সংস্করণ দিয়ে শুরু হবে। এটাই আপনার যাবতীয় স্বাধীনতার শেষ পর্যায়। একে আপনি সরু একটি পথ দিয়ে এগিয়ে নিলেও তা প্রকৃতিগতভাবেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবে।
আমাদের অর্থনৈতিক বা সামাজিক স্বাধীনতা নষ্ট করতে বাইরের শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু আত্মস্বাধীনতা অর্জন ও হারিয়ে ফেলার বিষয়টি একান্ত আপনার ওপর নির্ভর করে। এই স্বাধীনতায় নিজের ভেতরের পুরোটাকে ডুবিয়ে দিতে হয়। সেখান থেকে মানসিক নানা বিষয় আপনাকে টেনে তুলে আনতে চাইবে। আত্মিক স্বাধীনতাই আমাদের প্রভাবিত করে, সীমাবদ্ধতা তৈরি করে এবং সত্যিকার স্বাধীনতা উপভোগ করতে দেয়।
বিভিন্ন ধরনের স্বাধীনতা আমাদের কাছে এনে দিয়েছেন বহু মানুষ। দৈহিক স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছেন মহান রাজনৈতিক নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন ব্যবসায়ী সমাজ। আর আত্মার স্বাধীনতা পেতে হলে এখানে আপনার নিজেকেই নেতা হয়ে উঠতে হবে। এটাই আপনার বিবর্তনের অন্তিম পর্যায়।
যদি আত্মিক স্বাধীনতার দেখা না পান তাহলে আপনার এবং সকলের বিবর্তনের ষোলকলা পূরণ হবে না। অর্থাৎ, মানুষ হিসেবে আপনি পরিপূর্ণতা পাবেন না। এই স্বাধীনতার অভাববোধের বাহ্যিক প্রভাব আমরা অহরহ দেখি। এর অভাবেই কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত, কেউ বা সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন। আবার কারো জীবনযাপন হয়ে পড়ে পশুর মতো। এই স্বাধীনতা না অর্জন করতে পারলে আপনার ভেতরটাকে দখল করে রাখবে এক অশুভ ছায়া। এর হাত থেকে সহসা মুক্তি মেলে না। আর মুক্তির জন্য অর্জন করুন আত্মস্বাধীনতা।

Leave a Reply