হুট করে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে কী করবেন?

হুট করে ফ্রিজটা নষ্ট হয়ে গেলো মানে যে কোন বাড়িতেই ব্যাপারটা বেশ বড় এক বিপর্যয়। ফ্রিজ সারাতে অনেকগুলো টাকা খরচ তো হবেই, একই সাথে ফ্রিজে রাখা প্রয়োজনীয় সব কিছু নষ্ট হয়ে যাবে। রান্না করা খাবার তো আছেই, বিশেষ করে কাঁচা মাছ-মাংস ও সবজির নষ্ট হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাহলে উপায়? উপায় আছে বৈকি! জেনে নিন হুট করে ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে কোন কাজগুলো আপনার অর্থ সাশ্রয় করবে ও ফ্রিজের খাবারগুলোকে নষ্ট হতে দেবে না।

১) ফ্রিজটি নষ্ট হয়ে গেছে বা আর ঠাণ্ডা হচ্ছে না, এই ব্যাপারটা বোঝা মাত্র ফ্রিজের সুইচ বন্ধ করে দিন। বারবার অন-অফ করে ফ্রিজকে চালানোর চেষ্টা করবেন না। এতে কম্প্রেসারের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফ্রিজ বন্ধ করে অপেক্ষা করুন মেকানিক আসা পর্যন্ত।

২) ফ্রিজ নষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই ডিপ ফ্রিজের সবকিছু বের করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না। ফ্রিজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও ডিপ ফ্রিজের ঠাণ্ডা অনেকক্ষণ ঠিক থাকে। আপনি যদি ফ্রিজের দরজা না খোলেন, তাহলে জমাট বাঁধা মাছ-মাংস ৮/১০ ঘণ্টাতেও একেবারে অবিকৃত জমাট বাঁধাই থাকবে। তাই ডিপ ফ্রিজের জিনিস সংরক্ষনের জন্য বেশ অনেকটা সময় পাবেন।

৩) ফ্রিজে রান্না করা খাবার দাবার যা আছে, সেগুলো বের করে নিন কারণ সবচাইতে দ্রুত নষ্ট হবে এগুলোই। প্রতিটি খাবার চুলায় ভালো করে গরম করে রাখুন। খাবার টগবগ করে ফুটে উঠেছে, এমনভাবে গরম করবেন। একবার গরম করলে ৮/১০ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যাবে। এর মাঝেই খেয়ে ফেলুন।

৪) ভাত জাতীয় খাবার গরম করলে কাজ হবে না। ভাতে হয় পানি দিয়ে পান্তা ভাত বানিয়ে রাখুন। নতুবা উচ্চ চাপে ভাত ভাজি করে ফেলুন। পোলাও বিরিয়ানি হলে উচ্চ তাপে গরম করে নিন।

৫) সবজিগুলো বের করে ভালো করে মুছে নিন। যেন গায়ের সাথে পানি না থাকে। তারপর অল্প একটু রোদে মেলে দিন পানি পুরোপুরি টেনে যাওয়ার জন্য। পানি শুকিয়ে গেলে ছায়াময় ঠাণ্ডা স্থানে রেখে দিন।

৬) একটি বাটিতে পানি নিন, তারপর সস-মাখন-জ্যাম-জেলীর পাত্রগুলো অর্ধেকটা করে ডুবিয়ে এতে রেখে দিন। পাত্রটি ঠাণ্ডা স্থানে রাখুন।

৭) ডিমকে পানির মাঝে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা স্থানে রেখে দিন।

৮) শাক বা এমন পাতা জাতীয় খাবারকে একটু খানি পানির ছিটা দিয়ে রাখুন।

৯) এরপর আসে মাছ ও মাংসের পালা। মাছের বরফ গলে গেলে ধুয়ে হলুদ মেখে রাখতে পারেন। এতে আরও কয়েক ঘণ্টা মাছ ভালো থাকবে। তবে সবচাইতে ভালো হয় তেলের মাঝে ডুবোতেলে কড়া করে ভেজে রাখলে। এতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত মাছ ভালো থাকবে। এরপর রান্না করে রাখলে আরও ৭/৮ ঘণ্টা ভালো থাকবে। ফ্রিজ ঠিক হলে এই ভাজা মাছ আবারও ফ্রিজে রাখতে পারবেন।

১০) মাংস ভুনা ভুনা করে রান্না করে ফেলুন। দিনে দুবার মাংস জ্বাল দিয়ে রাখলে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে। রান্না করতে না চাইলে হলুদ, মরিচ, আদা , রসুন দিয়ে জ্বাল দিয়ে রাখুন। এটাও দিনে দুবার জ্বাল দিতে হবে। গরুর মাংস হলে শুঁটকি বানিয়ে রাখতে পারেন। লবণ মেখে তারের সাথে গেঁথে রোদে শুকাতে দিতে পারেন। কয়েকদিন শুকালেই চমৎকার শুঁটকি হয়ে যাবে।

১১) পায়েস ফিরনী ইত্যাদি খাবার ফ্রিজে থাকলে সেগুলোও পুনরায় জ্বাল দিয়ে ফেলুন।

এই টিপসগুলো প্রতিটিই আমি পরখ করে দেখেছি। কেননা ফ্রিজ নষ্ট অবার দুর্ঘটনা আমার জীবনে বেশ কয়েকবার ঘটেছে। কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন, উপকারে আসবে আপনারও।

Leave a Reply